বৃষ্টিস্নাত খাজুরাহো।

গল্প বলার আগে একটু ট্রেলার না দেখালে গল্পটা ঠিক জমে না। তাই প্রথমেই একটু ট্রেলার হোক।













 বৃষ্টি রাতে গানের মাটি ভেসে,
চাঁদ চলেছে অনেক দূর দেশে,
থমকে থাকা ধোঁয়াটে এস্রাজে
জমাট বাধা পুরনো সুর বাজে!
চোখ জোড়ানো স্বপ্ন মেলে ডানা,
অনেক কথা জেনেও হয়না জানা!
সময় শুধু মোমের মত পোড়ে ,
ভাবনাগুলো মেঘের সাথে ওড়ে!

একেক বৃষ্টির আমেজ একেক রকম। কেউ কেউ আছেন ঝুম বৃষ্টিতে খোলা ময়দানে ভিজতে ভালোবাসেন, কেউ বা ঘরের কোণে, কেউ ছাদে আবার কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দিকচক্রবালের পথে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি কেনো জানিনা আমাকে সাপুড়িয়া বাঁশীর মত ডাকতে থাকে। তাই এবারের rain drive এর সাম্ভাব্য গন্তব্য নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হঠাৎ একটা ভ্রমন সংখ্যায় বৃষ্টিস্নাত খাজুরাহের সুর্যমন্দিরের ছবিটা চোখে পরল। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে ফেললাম এবারের বৃষ্টিটা অতীতের ওঁম গায়ে মাখতে মাখতে উপভোগ করবো। 

আগষ্ট মাসে আমার জীবিকাজনিত কারনে মেঘের পেছনে ছোটাছুটি করার জন্য বেশি ছুটি ম্যানেজ করাটা বেশ চাপের। হাতে পেলাম মাত্র দুটো রাত আর তিনটি দিন। তাই আমাদের ভ্রমন পরিকল্পনায় প্রচুর কাঁচি চালিয়ে যেটা দাড়াল সেটা এরকম -

বিকেল বিকেল বেড়িয়ে সারারাত গাড়ি চালিয়ে সকালে খাজুরাহ পৌঁছাব।

হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ব মন্দির দর্শনে। 

পরের দিন রানে ফলস, পান্ডব ফলস ঘুরে কেন নদীর ধারে বসে সুর্যাস্ত দেখব।

এবং যথারীতি পরের দিন ছোটহাজারি করে বাড়ির পথে রওনা দেব। 

আমাদের যাত্রা হল শুরু, এখন ওগো কর্নধার, তোমারে করি নমস্কার।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সমস্ত গোছগাছ সেরে সেই বহু প্রতিক্ষিত দিনে যখন গাড়ি স্টার্ট দিলাম ঘড়ির কাঁটা তখন পাঁচটা ছুয়েছে।গাড়ির চাকা গড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে একটু খাজুরাহের ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলিয়ে ফেললাম। ভারতবর্ষের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এই খাজুরাহো মন্দির।চান্দেলা রাজবংশের রাজত্বকালে ( ৭০০ - ১১০০ খ্রিষ্টাব্দ ) এই মন্দির নির্মিত হয়। কথিত আছে প্রতিটি চান্দেলা বংশের রাজা সিংহাসনে আরোহনের পর অন্তত একটি করে মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। খাজুরাহের মন্দিরগুলি চান্দেলা রাজবংশের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। 
১০২২ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক আবু রিহান আল বুরনি এবং ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবন বতুতার লেখায় প্রথম খাজুরাহের মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। নয় বর্গমাইল জুড়ে অবস্থিত এই মন্দিরগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২৫ টি মন্দির অক্ষত অবস্থায় আছে যদিও ইতিহাসের পাতায় প্রায় ৮৫ টি মন্দিরের হদিস পাওয়া যায় যা আজ কালের গর্ভে বিলিয়মান।

চান্দেলাবংশের ধর্মীয় রাজধানী বলে পরিচিত এই মন্দির নগরী সুরক্ষাহেতু চারিধারে দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল এবং নগরে প্রবেশ বা নির্গমনের জন্য ৮ টি তোরণদ্বার ব্যবহার করা হত। কথিত আছে প্রতিটি তোরণদ্বারের দুপাশে দুটি করে খেজুর গাছ ( Debt Tree) লাগানো থাকতো। এই খেজুর গাছ থেকেই শহরের নাম হয় Khajurvahika অর্থাৎ সুবর্ন যুগের শহর ( City of golden dates) . তবে ইবন বতুতার বিবরণীতে মেলে সেকালের Jahuti রাজ্যের ( আজকের বুন্দেলখন্দ) রাজধানীও ছিল খাজুরাহোয়। তাই ইতিহাসের পাতায় কোথাও কোথাও খাজুরাহোকে Jahubhukti নামেও অভিহিত করা আছে।

১১ শতকের শেষের দিকে মুসলিম হার্মাদের হানায় চান্দেলা বংশের পতন ঘটে। খাজুরাহের গরিমাও ম্লান হয়ে পড়ে এবং বহু স্থাপত্য ধুলিস্মাত হয়। মন্দির নগরী বাঁচাতে সকল অধিবাসী একযোগে শহর পরিত্যাগ করে এবং ১৩০০ থেকে ১৮০০ সাল অব্দি এই নগরী ঘন জঙ্গলের নিচে চাপা পরে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। ১৮১৯ সালে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার T S Burt এলাকা সার্ভে করতে গিয়ে নতুন করে খাজুরাহের খোঁজ পান। ১৯২৩ এর খননে লোকসমক্ষে আসে খাজুরাহের মন্দিররাজি। ১৯৮৬ সালে এটি UNSECO এর World Heritage Site এর অর্ন্তভুক্ত হয়।

ইতিহাসের পাতায় মুখ গুজে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাখা পথের সোঁদা গন্ধ নাকে মেখে, মাঝে মাঝে রাস্তার পাশের ধাবাতে ঘন দুধের চায়ের স্বাদ নিতে নিতে নৈশভিযান, সঙ্গে কিশোরের গান, এতগুলো অনুঘটক যদি একসাথে কাজ করে কোনো দুরত্বই তখন বোধহয় দুর বলে মনে হয় না।ঝড়ের গতিতে দুরত্ব কমতে থাকলো।রাতের খাবার আমরা বাড়ি থেকেই তৈরী করে নিয়েই বেরিয়েছিলাম। সময়মতো সপরিবারে একটা পেট্রলপাম্পের সামনে দাড়িয়ে ডিনারটা সেরে নিলাম।আস্তে আস্তে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহারের সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পরলাম উত্তরপ্রদেশ। উত্তরপ্রদেশে ঢোকার পর থেকেই রাস্তার অবস্থা উত্তোরত্তর খারাপ হতে থাকলো। এখান থেকে খাজুরাহো যাওয়ার দুটি রাস্তা। একটি মির্জাপুর - রেওয়া - সাতানা হয়ে আরএকটি এলাহাবাদ - চিত্রকোট হয়ে। যেহেতু প্রথম বিকল্পটিতে কিছুটা কম পথ ভ্রমন করতে হয় তাই প্রথম থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম যাওয়ার সময় এই পথটি ধরব।কিন্তু অতীব খারাপ রাস্তা, এক মানুষ সমান গর্ত, গাড়ির দুলুনিতে মোটামুটি নৌকার ভ্রমনের আমেজ, অঝোর ধারায় বৃষ্টি সবকটি বিপরীতার্থক ফ্যাক্টরের মাঝে পরে হাবুডুবু খেতে খেতে যখন খাজুরাহো গিয়ে পৌছলাম তখন আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।যাই হোক পেটে তখন ছুঁচোরা ডনবৈঠক শুরু করে দিয়েছে তাই আর দেরি না করে সোজা চলে গেলাম ' রাজা কাফে '।



 বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সুস্বাদু খাবার, সব থেকে বড় জিনিস খেতে খেতে বেশ মন্দিরের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ভরপেট গরমাগরম খাবার এনার্জি লেভেলটাকে আবার পুরোপুরি রিচার্জ করে দিল। তাই দেরি না করে টিকিট কেটে ঢুকে পরলাম পশ্চিমের মন্দিরাজি দর্শন করতে। টিকিট মাথাপিছু ৩০ টাকা। ১২ বছর বয়স অব্দি টিকিট লাগে না।












এই ফাঁকে টুক করে একটু পশ্চিমের মন্দিরাজির গল্পটা বলে দি। কান্ডারীয় মহাদেব, লক্ষণ, বিশ্বনাথ, চিত্রগুপ্ত, দেবী জগদম্বা সহ ১২ টি মন্দির নিয়ে বেড়াজালে ঘেরা মহুয়া বাগিচায় এই মন্দিররাজি।যেন পাথরের জাহাজ চলছে সারি দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে।রাজা লক্ষণবর্মন কান্ডরীয়ের আদলে তৈরি (৯৫৪ খ্রী.) করান লক্ষণ মন্দির। বর্হিভাগে মন্দির অলঙ্করনে - রণসাজে সেনাদল, যুদ্ধসাজে শিকারি, হাতি - ঘোড়া - উট, অপ্সরা পরিবৃত স্বর্গের দেবতা, বৈচিত্র্যপূর্ণ মিথুন মুর্তি এমনকি ঘোড়ার দিকে ধাবমান পুরুষ মধ্যযুগীয় ভাস্কর্যের অমর নিদর্শন। লক্ষণের বিপরীতে লক্ষী মন্দির। অতীতে বিষ্ণুর বাহন গরুর ছিলেন মন্দিরে। পাশেই ৯০০ খ্রীষ্টাব্দে তৈরি বরাহ মন্দির। কিংবদন্তী আছে, মহর্ষি কশ্যপ ও দিতির পুত্র হিরণ্যাক্ষ ব্রম্ভার বলে বলীয়ান হয়ে পৃথিবী চুরি করে পাতালে লুকিয়ে রাখে। দিশাহারা দেবতারা তখন বিষ্ণুর স্মরণ নিতে বরাহ রূপ ধারন করে মাটি খুড়ে হিরণ্যাক্ষকে বধ করে বিষ্ণু পৃথিবী উদ্ধার করেন। ৮ ফুট লম্বা আর ৬ ফুট উঁচু বরাহ মুর্তির গায়ে ৬২৭ হিন্দু দেবদেবীর মুর্তি খোদাই আছে। তবে এখানের মূল আকর্ষন কান্ডারীয় মহাদেব মন্দির। ৩১ মিটার উঁচু এই মন্দিরটি খাজুরাহের সবথেকে বৃহত্তম আর উচ্চতম মন্দির। মামুদ অব গজনির যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসাবে ১০৩০ খ্রীষ্টাব্দে মহারাজা বিদ্যাধর এই কান্ডারীয়টি নির্মান করান। সারা মন্দিরে অসংখ্য উড়ন্ত দেবদেবী, কামুক অপ্সরা, নানান জীবজন্তু, প্রেমিক প্রেমিকা, মিথুন মূর্তি খোদিত রয়েছে। গাইডের মুখে গল্প শুনতে শুনতে কখন যেন একাত্ম হয়ে পড়েছিলাম মন্দিরগুলোর সাথে। চোখের সামনে যেনো ছায়াছবির মত ভেসে যেতে লাগলো চান্দেলা বংশের ইতিহাস।সম্বিত ফিরলো ঘন্টাধ্বনির শব্দে। আজকের মত সময় শেষ। আমার শরীরের ব্যাটারি লেভেলও তখন রীতিমত ডাউন। তাই সময় নষ্ট না করে সকাল সকাল ডিনার সেরে শরীরকে ছেড়ে দিলাম হোটেলের নরম বিছানায়।




দ্বিতীয় দিন :-
বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে
হাটছি আমি মেঠো পথে
মনের ক্যানভাসে ভাসছে তোমার ছবি।




সকালে চোখ মেলেই দেখি চারিদিক কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, গুড়ুগুড়ু মেঘের গর্জনের সাথে ঝরঝর বৃষ্টি। যাকে বলে পুরো ছলোছলো ওয়েদার।লটারিতে ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়ার মত আনন্দ নিয়ে একলাফে নেমে পরলাম খাট থেকে। জানলায় দাঁড়াতেই দেখি সবুজ নিড়ানো জলধারা জানলার সার্সির ওপর দিয়ে  এঁকেবেঁকে চলে যাচ্ছে । ঠিক যেন মনে হচ্ছে ফোটো সপে তৈরি করা কিছু ছবি আমার সামনে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে। সামনের দেবদারু গাছের পাতাগুলো ভিজে একাকার । আকাশ থেকে সুক্ষ কাঁচের গুড়োর মত বৃষ্টি ঝরে পরছে সবুজ গালিচার ওপর । মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়ে বেড়িয়ে পরলাম হোটেলের সুইমিং পুলের উদ্দেশ্যে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে নীল জলে দাপাদাপি অনেক পুরোনো স্মৃতিকে আবার নতুন করে তাজা করে দিল। আগের দিনের সমস্ত ক্লান্তি যে কোথায় একনিমেষে ভ্যানিশ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।কিন্তু এদিকে হাতে সময় কম। কিছু ঘোরাঘুরিও তো করতে হবে। নাহলে তো গিন্নীর মুখের আধাঁর আবার আকাশের সব আধাঁরকে ছাপিয়ে যাবে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুল থেকে উঠে ঝটফট রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলাম সাইডসিন ঘুরতে। বুঝতে পারলাম এই বৃষ্টিতে যে সময় নষ্ট হলল তাতে আমার পুরোনো প্ল্যানে অনেক রদবদল করতে হবে। তাই প্রথমেই গাড়ি ছোটালাম রানহে ফলসের উদ্দেশ্যে।








খাজুরাহো থেকে ২২ কিমি দূরে কেন নদীর ওপর এই শ্বাসরুদ্ধকর জলপ্রপাতটির খোজ অনেকেই রাখেন না। গোলাপি, লাল, ধুসর সহ বিভিন্ন রংয়ের বিশুদ্ধ ক্রিস্টাল গ্রানাইট দিয়ে নির্মিত ৩০ ফুট গভীর এই প্রাকৃতিক জলপ্রপাতটির বর্ষাকালের রূপটা কিন্তু অতুলনীয়। ছোট ছোট অসংখ্য ফলস নিয়ে গড়ে ওঠা এই ফলসটি কিন্তু নায়াগ্রার ভারতীয় সংস্করন নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। ফলসটায় ঢোকার রাস্তাটাও কিন্তু একটা স্বর্গীয় অনুভুতি এনে দেয়। চারদিকে সবুজ জঙ্গলের হাতছানি, মাঝখান দিয়ে পথ।  অঝোর ধারায় বৃষ্টির মধ্যে বেশ একটা রোমাঞ্চকর অনুভুতি। এখানে টিকিট মূল্য ৫০ টাকা প্রতিজনা। গাইড বাধ্যতামুলক ৭৫ টাকা। টিকিট কেটে ঢুকে পরলাম। পার্কিং প্লেসে আমাদের গাইড আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। টিকিট দেখাতেই উনি আমাদের জায়গাটা ভালো করে ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিলেন। পুর্ববর্তী কিছু এক্সিডেন্টের জন্য পুরো যায়গাটা রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।






বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আমরা বেড়িয়ে পরলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য পান্ডব ফলসের দিকে।পান্না থেকে ১৪ কিমি ৩০ মিটার উঁচু এই ফলসটিও কেন নদী থেকে উৎপত্তি হয়েছে। ৫০ টাকা জনপ্রতি টিকিট এবং ৭৫ টাকা গাইড চার্জ। জনশ্রুতি আছে পান্ডবরা তাদের অজ্ঞাতবাসের কিছুটা সময় এখানে কাটায়। এই ফলসটার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে প্রকৃতি নির্মিত গুহার ওপর সারা বছরই পাহাড় থেকে জল পড়ে।






এবার আমাদের গন্তব্য খাজুরাহের দক্ষিণ গোষ্ঠী মন্দির।  দুলাদেও আর চতুর্ভুজ এই দুই মন্দির নিয়ে দক্ষিণ গোষ্ঠী। বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে অবস্থিত বলে দর্শকসংখ্যা তুলনামূলক কম। দুলাদেও মানে নববধু মন্দিরটি ১১০০-৫০ এ চান্দেলা রাজাদের গড়া শেষ মন্দির। পূবমুখী এই শিবমন্দির পাঁচ ভাগে গড়ে উঠেছে। তোরনদ্বারে গঙ্গা, যমুনা,অষ্টবসু,যমরাজ, মন্দিরের গায়ে বিচিত্র মিথুন মুর্তি অনবদ্য স্থাপত্যের নিদর্শন।দুলাদেও আর চর্তুভুজ মন্দিরে ছবি তোলা শেষ করতেই   পেটপুজার ইচ্ছেটা বেশ প্রগাঢ় ভাবে চাগাড় দিয়ে উঠল। তাই আর দেরী না করে টুক করে ঢুকে পরলাম 'গান্ধী কাফে'। নামে গান্ধী থাকলেও বেশ সুস্বাদু নন ভেজ খাবার পাওয়া যায় কাফেটিতে।গরমাগরম রুটি আর দেশি মুরগী সহযোগে পেটপুজাটা বেশ জমজমাটই হলো। ইচ্ছে ছিল শেষ পাতে মিষ্টির মত অমিতাভ বচ্চনের ধারাভাষ্যে লাইট এন্ড সাউন্ডের মাধ্যমে চান্দেলা বংশের ইতিহাসটা শুনে এই ট্রিপটা  শেষ করব। কিন্তু বিধি বাম। কিছু টেকনিকাল ফল্টের কারনে লাইট এন্ড সাউন্ডের সম্প্রচার বন্ধ ছিল।তাই আর দেরি না  করে পা বাড়ালাম হোটেলের উদ্দেশ্যে। অদ্যই খাজুরাহ ভ্রমনের শেষ রজনী।  তাই গিন্নি আর মেয়েকে হোটেলের ঘরে ঢুকিয়ে টর্চটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম অন্ধকার পথে। একাকী পথ যেনো আজ আমার গাইড,  আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো অতীতের অন্ধকারে। মৃদুমন্দ বাতাস আমার কানে যেনো ফিসফিস করে বলে গেলো অতীতের খাজুরাহের ইতিহাসের গল্প।আরো একবার মনে পড়ে গেলো  Eduardo Galeno - এর সেই বিখ্যাত উক্তি -

History never really says goodbye.
History says, 'See you later.'

কিছু জরুরি তথ্য :

কোথায় থাকবেন -

খাজুরাহোতে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল পাবেন। দক্ষিন মন্দিররাজির সামনে Hotel Harmoni, Hotel Surya,Hotel Sunset View, Hotel Casa Di William, The Lalit Temple View। এগুলি  সবই সমমানের। ভাড়া মোটামুটি ৮০০-১৫০০ এর মধ্যে। একটু উচ্চবাজেটের হোটেল খুজলে চলে যান Hotel Clerks, Hotel Chandela, Hotel Ramada, Hotel Radison Jass বেশ উল্লেখযোগ্য।

কিভাবে যাবেন :

ট্রেনে এলাহাবাদ - মুম্বাই রেলপথে সাতনা স্টেশন।এলাহাবাদ হয়ে মুম্বাইগামী প্রতিটি ট্রেন সাতনা হয়ে যাচ্ছে।সাতনা থেকে খাজুরাহের দুরত্ব ১২০ কিমি।সময় লাগে ৪ ঘন্টা।সকাল থেকে প্রচুর জব্বলপুরগামী বাস ছাড়ে সাতনা বাসস্ট্যান্ড থেকে যেগুলি খাজুরাহের উপর দিয়ে যায়। এছাড়াও শেয়ার গাড়িও মেলে সাতনা থেকে।
সড়কপথ : মধ্যপ্রদেশের রাস্তা তুলনামুলক ভাবে বেশ খারাপ। বেষ্ট অপশান হলো এলাহাবাদ বাইপাস হয়ে SH 94 ধরে কৌশাম্বী - রাজাপুর - আতারা।  সেখান থেকে বাঁদিকের SH 49 ধরে অজয়গড় বাইপাস  - পান্না।  এই রাস্তাটি সোজা মিশেছে NH39।  রাস্তাটা ধরে ৩৪ কিমি এগিয়ে বাদিকে একটি রাস্তা বেঁকে যায় যে রাস্তাটি সোজা খাজুরাহো পৌছায়। মোড়টি থেকে খাজুরাহের দুরত্ব ১১ কিমি।



Comments

Popular posts from this blog

Keonjhar – A hidden Gem of Orissa

ঘাটশিলার ডায়েরী ( The story of Ghatshila )

মান্ডুর প্রেম কথা