The Story Of The Vivekananda Rock Memorial




বিবেকানন্দ রক, শব্দটা শুনলেই আপামর ভারতবাসীর মনে কন্যাকুমারীর শেষপ্রান্তে যে স্মৃতিসৌধটির কথা ভেসে আসে তার সাথে আমরা সকলেই প্রায় অল্পবিস্তর পরিচিত। ভারতবাসীর অত্যন্ত গর্বের এই সৌধটির নির্মান ইতিহাসটা কিন্তু অনেকেরই অজানা। আসুন আমরা আজ আমাদের অতি প্রিয় এক ভ্রমনস্থলের ইতিহাসটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে দেখি।

গল্পের শুরুতেই আপনাকে কিন্তু পিছিয়ে যেতে হবে ১৯৬২ সালের একদম শুরুতে, সারা ভারতজুড়ে তখন স্বামীজীর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে সাজো সাজো রব। সমগ্র রামকৃষ্ণ মিশন আর তার সহোযোগী সংস্থাগুলি সারা ভারত জুড়ে মহা সমারোহে স্বামীজীর মহান কর্মকান্ডের প্রচার করে চলেছে। সেই সময়ে কন্যাকুমারীর কিছু বিশিষ্ট মানুষজন স্বামীজী যে পাথরটির উপর বশে ধ্যান করতেন সেই পাথরটির উপর স্বামীজীর একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপনের আর্জি নিয়ে তৎকালীন 'Haindeva Seva Sangh' এর প্রেসিডেন্ট শ্রী Velayudhan Pillai এর সাথে দেখা করেন , এবং তার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়।কাকতলীয়ভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের আয়োজিত মাদ্রাজের একটি পাবলিক মিটিংয়েও প্রায় অনুরুপ এক প্রস্তাব গ্রহন করা হয়।

কিন্তু বিধি বাম। আগুনের গতিতে এই প্রস্তাবের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই কন্যাকুমারীর কিছু ক্যাথলিক ধর্মাবলম্নী মানুষ বেঁকে বসেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কন্যাকুমারীর জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টান। রাতারাতি তারা পাথরটার উপর একটি বিশাল ক্রশ বসিয়ে ফেলেন যেটি তীর থেকেও খুব সহজেই দৃশ্যমান ছিল।

পাথরটি “Saripada Parai” নামে প্রচলিত, বরাবরই হিন্দুদের একটি পবিত্র উপাসনাস্থল।কথিত আছে কন্যাকুমারী মাতা এই পাথরটিতে বসেই ধ্যান করতেন। স্বাবাভিকভাবেই এই ক্রুশ স্থাপন সাধারন হিন্দুদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে বেশ কিছু রাঘববোয়াল।ইতিমধ্যে 'Kanyakumari temple Devaswom' পাথরটি তাদের সম্পত্তি বলে দাবী করে মাদ্রাজ হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করে।

১৯/০৮/১৯৬২ সালে 'Kanyakumari District Committee', 'Devaswom' বোর্ডকে পাথরটির উপর একটি স্মৃতিসৌধ, একটি পায়েহাঁটা সেতু আর নিঃশুল্ক নৌকা পাড়াপাড়ের অনুমতি দেয়।লোকাল খ্রীষ্টধর্মী মাঝিদের অসহযোগীতার কারনে মেম্বারদের কেরালা থেকে ১০-২০ জন লোক এনে ফেরী ব্যবস্থা চালু করতে হয়। ইতিমধ্যে মাদ্রাজ হাইকোর্ট অন্তর্বতীকালীন আদেশ দেন অবিলম্বে পাথর থেকে ক্রুশ সরিয়ে ফেলতে হবে।বেশ থমথমে আবহাওয়ার মধ্যেই একদিন রাতারাতি দেখা গেল ক্রুশ গায়েব। ব্যাস, আগুনে ঘি পড়ল।প্রায় রায়ট লাগে লাগে। কোনক্রমে ১৪৪ ধারা জারী করে আর সশস্র পুলিশ পোষ্টিং করে অবস্থা আয়ত্বে আসে।

বিপদকালীন পরিস্থিতিতে 'Kanyakumari District Committee' নিজের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলে বোর্ডকে স্টেট গর্ভমেন্টের কাছ থেকে স্মৃতিসৌধের অনুমতি যোগাড় করতে বলে এবং স্টেট পত্রপাঠ তা নামান্‌জুর করে।

তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী Bhaktavatsalam পাথরটিতে একটি সাধারন ফলক বসানোর অনুমতি দেন, যেখানে লেখা থাকে অমুক তারিখ থেকে অমুক তারিখ স্বামীজী এই রকে বসে ধ্যান করেছিলেন।১৭/০১/১৯৬৩ সালে পাথরটির উপর ফলকটি স্থাপনা করা হলেও তা সাধারন মানুষ্কে খুশি করতে পারেনি। ফলে স্বামী চিন্মায়ানন্দ, গুরুজী গোলকার প্রমুখের নেতৃত্বে বৃহৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়। যদিও তারা খুব ভালোভাবেই জানতেন খুব প্রভাবশালী কাউকে পাশে না পেলে এই আন্দোলন দানা বাধবে না। এই সময়ে রঙ্গমঞ্চে আবির্ভুত হন একান্ত রানাডে।



কে এই একান্ত রানাডে?

তৎকালীন RSS এর general secretary রানাডে স্বামীজীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে 'Rousing Call to Hindu Nation' নামে একটি বই লিখে প্রভুত খ্যাতি অর্জন করেন। বইটি প্রকাশ করেন Shri Madhavananda Maharaj, the President of the Ramakrishna Mission। একদিকে RSS এর general secretary হওয়ার কারনে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে তার অবাধ বিচরন , অপরদিকে রামকৃষ্ণ মিশনের বেঙ্গল লবীর সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ থাকার কারনে Guruji Golwalkar রানাডে কে ১১/০৮/১৯৬৩ সালে VRM Committee এর Organizing Secretary পদে বসান।

রানাডে কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন প্রধানত দুজন ব্যক্তি এই ধারণাটির বিরোধিতা করছেন।

প্রথমজন Humayun Kabir, Cultural Minister, এবং দ্বিতীয় জন Shri Bhaktavatsalam, CM of Tamil Nadu।

রানাডে জানতেন শ্রী Kabir প্রথম থেকেই তাঁর নির্বাচনী এলাকা কলকাতা থেকে বিজয়ী হয়ে আসছেন।

তাই রানাডে এক মাষ্টার স্ট্রোক দেন। ০২/০৯/১৯৬৩ সালে কলকাতার প্রেস ক্লাবে একটি সর্বধারতীয় প্রেস কনফারেন্স ডেকে তিনি Shri Humayun Kabir এর বিরোধিতা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। সমস্ত কাগজপত্র বিশেষ করে আনন্দবাজার পত্রিকা এবং কিছু সম্পাদকীয় শ্রী কবিরের সমালোচনা করতে থাকে।নিজের নির্বাচনী এলাকা কলকাতায় তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাতে থাকেন।

চাপের মুখে শ্রী Kabir নতি স্বীকার করে রানাডেকে ডেকে জানান যে তিনি কোনভাবেই এই স্মৃতিসৌধের বিরোধী নন। যদি কমিটি মাদ্রাজ সরকারের অনুমতি যোগাড় করতে পারে তাহলে তার তরফ থেকে স্মৃতিসৌধের নির্মানে কোনরূপ বাধা থাকবে না।
এবারে পড়ে রইলেন Shri Bhaktavatsalam। ইনি ছিলেন সত্যিকারের শক্ত গাঁট। একমাত্র পণ্ডীত নেহেরু ছাড়া আর কারো কথা তিনি গ্রাহ্যের মধ্যে আনতেন না। এবার রানাডে দিল্লীতে শ্রী Lal Bahadur Shashtri এর শরনাপন্ন হলেন। তিনি সব শুনে বললেন “You mobilize public opinion & when the time comes, I will tell you, ‘now it is my work’. (তুমি জনগনের কাছ থেকে অধ্যাদেশ নিয়ে এস, এবং যখন আমি বুঝবো সময় অভ্যাগত আমি তখন থেকে আমার কাজ শুরু করবো।)

রানাডে কিন্তু আশা ছাড়লেন না। তিনি পার্লামেন্টের বিভিন্ন সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদেরকে convinced করার চেষ্টা করতে থাকেন। হঠাৎ তার মাথায় একটি প্ল্যান আসে। তিনি ঠিক করেন যত বেশি সম্ভব বর্তমান সংসদ ভবনের বিভিন্ন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সইসম্বলিত একটি আবেদনপত্র পন্ডিত নেহেরুর হাতে তুলে দেবেন।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তৎকালীন Secretary of the Congress Parliamentary Party Shri Raghunath Singh M.P. from Banaras এই পিটিশনের প্রথম সইটি করেন। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন Shri Ram Manohar Lohia ,Shri Ranga , Shri Vajpayee , Smt Renu Chakravarti , C N Annadurai প্রমুখ। ২৬/১২/৬৩ সালে পার্লামেন্টেShri M S Aney এই ৩২৩ জন মেম্বারের সই সম্বলিত আবেদনপত্রটি পন্ডিতজীর হাতে তুলে দেন। এবং পন্ডিতজী নিজে এই ব্যপারে মাদ্রাজের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলার আশ্বাস দেন।

এটি রানাডের অপর একটি মাষ্টার স্ট্রোক ছিলো। তার দুদিনের মধ্যে The Hindu পত্রিকায় একটি বিবৃতি দিয়ে Shri Bhaktavatsalam জানিয়া দেন পাথরের উপর স্মৃতিসৌধ নির্মানে তার কোনরুপ আপত্তি নেই। এবং Swami Chidbhavananda জীকে ডেকে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার অনুরোধ করেন।Shri S K Achari কে Chief Architect হিসাবে নিয়োগ করা হয় , এবং শঙ্করাচার্য শিলা শাস্ত্রের আয়াতগুলি উদ্ধৃত করে শ্রী আচারীকে একটি বিশেষ নকশা প্রণয়ন করার অনুরোধ করেন।

Dr Radhakrishnan, Pt Nehru, Shri Lal Bahadur Shastri, Shri M C Chagla, President of the amakrishna Mission & Shankaracharya of Kanchi Kamakoti Peetam. এই ছয় জন বিশিষ্ট ভারতীয় এই সৌধ নির্মানে এক প্রধান ভুমিকা গ্রহন করেন।
০৬/১২/১৯৬৪ তে এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়। এবং প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা এই বাবদ ব্যয় হয়।
Ambasamudram থেকে grey granite এবং Tuticorin থেকে red granite এনে কাজ করানো হয়।এবং রকের উপর প্রায় ৭০ ফুটের একটি কাঠামো বসানো হয় যা বহু দুরদুরান্ত থেকে দৃশ্যমান।৭/০১/১৯৭২ সালে স্বামীজীর ১০৮ তম জন্মদিনে এই স্মৃতিসৌধের সরকারী ভাবে শুভ উদ্বোধন ঘটে।


পুনশচ ঃ আমি কোন ইতিহাসের ছাত্র না , বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যাবলি সাজিয়ে আমার এই ছোট্ট প্রয়াস।কোন ভুল থাকলে সঠিক প্রমান সহ উল্লেখ করলে খুশি হব।















Comments

Popular posts from this blog

Keonjhar – A hidden Gem of Orissa

ঘাটশিলার ডায়েরী ( The story of Ghatshila )

মান্ডুর প্রেম কথা